Our social:

Thursday, August 25, 2016

ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের অগ্রনায়ক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পূত জন্মদিন আজ ।

আজ ২ আগস্ট বাঙালি তথা ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের অগ্রনায়ক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পূত জন্মদিন। ১৮৬১ সালে বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান বিজ্ঞানসাধক। পিতা ছিলেন বহুভাষাবিদ, সুপণ্ডিত, সমাজসেবী ও বিদ্যোৎসাহী হরিশচন্দ্র রায়চৌধুরী এবং মাতা
ভুবনমোহিনী দেবী।
জমিদার পরিবারে জন্ম হলেও, তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত।
১৮৭৯ সালে তিনি কোলকাতার আলবার্ট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েন।
১৮৮২ সালে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি নিয়ে লন্ডন থেকে বি.এস.সি পাশ করেন।
১৮৮৭ সালে রসায়ন শাস্ত্রে মৌলিক গবেষণার জন্যে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.এস.সি ডিগ্রী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হোপ পুরষ্কার লাভ করেন।
১৮৮৯ সালে কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়নের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরাধীন ভারতবর্ষের বিজ্ঞান শিক্ষায় মন -প্রাণ সমর্পণ করেন।
পরে তিনি এই বিভাগেই ১৯১১ সালে বিভাগীয় প্রধান এবং অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ১৯০১ সালে 'বেঙ্গল কেমিক্যাল এবং ফার্মাসিটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড ' এর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলায় প্রথম সার্থক রাসায়নিক দ্রব্য এবং ঔষধের কারখানা স্থাপন করা।
বিজ্ঞানে বহু মৌলিক আবিষ্কারের কারণে তিনি বাংলা এবং ভারতে তাঁর সমসাময়িক প্রায় সকল বিজ্ঞান সভার সভাপতিত্ব করেন।
বিশুদ্ধ বিজ্ঞান বিশেষ করে রসায়ন শাস্ত্র ছাড়াও তিনি বহু সামাজিক সমস্যায় আমাদের করণীয়, বর্জনীয় বিষয় নিয়ে লিখে গিয়েছিলেন আমৃত্যু। বিজ্ঞান, অর্থনৈতিক, সমাজভাবনা,সাহিত্য, শিল্প,শিক্ষা, আত্মবিক্ষা,রাজনীতি, রবীন্দ্রনাথ, প্রকৃতি ও পরিবেশ ; কি নেই তাঁর লেখায়!
(এ বিষয়ে আগ্রহীরা পড়তে পারেন দে'জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত পিনাকপাণি দত্ত এবং শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রবন্ধসংগ্রহ। ৫৯১ পৃষ্ঠার অসাধারণ একটি বই।)
তাঁর গবেষণার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তিরূপে ধরা হয় প্রাচীন ভারতে হিন্দুদের বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসের গ্রন্থ - 'হিস্ট্র অব হিন্দু কেমিস্ট্রি (দুই খণ্ডে) ' এ অমূল্য গ্রন্থটি। একবুক বিস্ময় নিয়ে এ বইটি পড়লাম। অবাক হলাম যে ১৯০২ সালে তিনি এ বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেন ; কিন্তু আজ ২০১৬ তে এসেও এ বই আমাদের হাতের সীমানার বাইরে! এ বইয়ের প্রত্যকটি তথ্য জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু এ সকল প্রাচীন গৌরবের তথ্য জানিনা বলেই, আমরা বাঙালি হিন্দুরা দিনে দিনে হতচ্ছাড়া, লক্ষ্মীছাড়া হয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রাচীন গৌরব যদি সঠিকভাবে নাই জানি, তবে আমাদের মধ্যে স্বাভিমান, আত্মশ্লাঘাবোধ জাগবে কি করে?
বাংলায় রসায়নের চর্চার আকাঙ্ক্ষায় তিনি ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দুইলক্ষ টাকা দান করেছিলেন। সেই সময়ের দুইলক্ষ টাকা আজ হয়তো তা কয়েকশো কোটি টাকা হবে। ভাবা যায়!
সারা জীবনব্যাপী বাংলা মায়ের সেবা করেছেন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। কিন্তু আজ বলতে খুব খারাপ লাগছে যে, তাঁর মাতৃভূমি এই বাংলাদেশে তিনি কি তাঁর যোগ্য সম্মান পেয়েছেন? এতো কাজের পরেও কেন তিনি তার মাতৃভূমিতে অবহেলিত! যিনি এদেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তির অগ্রনায়ক, তাঁর নামে কি দেশে এতোগুলো বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিরও নামকরণ করা যেত না! অথবা তাঁর নামে সামান্য একটা হলেরও তো নামকরণ করা যায়! প্রশ্ন রইলো সবার প্রতি।
যতদিন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের মতো দেবতুল্য ব্যক্তিরা তাঁদের যোগ্যসম্মান না পেয়ে, অবহেলার ধুলোতে পরে থাকবে; ততোদিন এ জাতি, এ দেশ মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

( জন্মদিনে আচার্যের প্রতি রইল অনন্ত শ্রদ্ধা)

 Author : 


Kushal Chakraborty




0 comments:

Post a Comment