শ্রীমদ্ভগবদগীতা
আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর আগে এই অগ্রহায়ণ মাসেই শ্রীভগবান আমাদের মাঝে শ্রীমদ্ভগবদগীতা র বাণী দেন। যা বৈদিক জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদের সারাংশ। এই কারণে গীতার শুরুতে মঙ্গলাচরণ ধ্যানেই বলা হয়েছে-
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।
বৈদিক আত্মতত্ত্বের জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদ গাভীস্বরূপ, সে গাভীর দুগ্ধের দোহনকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং গাভী দোহানোর সময়ে যে বাছুরের প্রয়োজন হয় সে বাছুর অর্জুন আর দুগ্ধরূপ অমৃতময়ী গীতার জ্ঞান পান করেন, আস্বাদন করেন সুধী-জ্ঞানীগণ।
এই শ্লোকটির মর্মার্থ এককথায় বলতে হলে, এভাবে বলতে হয় - গীতা বৈদিক আধ্যাত্মিক, আত্মতত্ত্বের সকল জ্ঞানের সারাংশ। এ কারণেই গীতা আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলের জীবনে এতোটা আদরণীয় এবং যুগপৎ পূজনীয়।
এই বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ শ্রীমদ্ভগবদগীতা
ঠিক কত বছর পূর্বে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয় তা নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক
মতান্তর। অবশ্য মতান্তরগুলো তৈরির পিছনে দায়ী প্রধানত ইয়োরোপ, আমেরিকা সহ
বিভিন্ন বিদেশী পণ্ডিতকূল এবং তাদের মতানুসারী দেশীয় পণ্ডিতকূল । তাদের
একটা বৃহত্তম অংশই ইচ্ছা খুশী মতো আমাদের বৃহৎভারতবর্ষের বিভিন্ন গ্রন্থ
এবং ঐতিহাসিক ঘটনায় ইতিহাসের সাহিত্যিক এবং পুরাতাত্ত্বিক উপাদানের
তোয়াক্কা না করে যেমন খুশী সময়কাল বসিয়ে দিয়েছেন তাদের লেখা গ্রন্থগুলোতে। এ
কারণে আমাদের ইতিহাসের সকল বিষয় নিয়ে আমরা প্রচণ্ড ধুম্রজালে আচ্ছন্ন হয়ে
হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলে বেড়াই আমাদের কোন সঠিক ইতিহাস নেই!
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরু প্রায় একই সময়ে হয়েছে, মাঝে হয়তো সামান্য কয়েকশো বছরের ব্যবধান ছিলো। এ সময়কালটা ঠিকমতো বের করতে পারলে আমরা ভারতীয় ইতিহাসের অনেক অজানা গ্রন্থিকে মোচন করে দিতে পারি। যদি আমরা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সময় বের করতে পারি আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো কয়েকটি বিষয়ে -
১. কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল।
২.গীতার জন্মদিন।
৩.ব্যাসদেবের সময়কাল।
৪. বর্ত্তমান কল্পে ব্যসদেব কর্তৃক বেদ সম্পাদনার সময়কাল।
৫. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময়কাল।
৬.মহাভারতের সময়কাল।
৭. কুরু-পাণ্ডবদের সময়কাল।
৮.কলিযুগের শুরু।
৯. শ্রীমদ্ভাগবতের সময়কাল সহ আরো অসংখ্য ঐতিহাসিক বিষয় এবং ঘটনার সময়কাল।
এ সময় বের করার বিষয়ে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সম্পর্কে এ দেশীর প্রাচীন বিদ্বানজনেরা কে কি বলেছেন তা আগে দেখে নেই-
১. কালিদাসের নামে প্রচলিত জ্যোতির্বিদাভরণ গ্রন্থের দশম অধ্যায়ে বলা আছে মহাভারতের যুদ্ধের পরে যুধিষ্ঠিরের ক্ষমতা সময় হলো ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্ব।
২. জ্যোতির্বিদ ও ভাস্করাচার্য এবং মকরন্দ নামক অপর একজন জ্যোতির্বিদের মতে কলিযুগের আরম্ভ ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৩. বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ আর্যভট্টের (৪৭৬ খ্রি.) মতে কলিযুগের আরম্ভকাল ৩১০২ খ্রিস্ট পূর্বের ১৮ ই ফেব্রুয়ারির সূর্যোদয় কাল।
৪. দক্ষিণের চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী কুরুক্ষেত্র মহাসমরের কাল নির্নয় করেন এবং তার নির্দেশে রবিকীর্তি নামক কবি ঐ কাল নির্ণায়ক শ্লোকাকারে রচনা করেন এবং পরে পুলকেশী সেই শ্লোককে শিলা ফলকে ক্ষোদিত করে অমর করে দেন। তার মতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৫. আলবেরুনী দশম -একাদশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত নানা শাস্রে সুপণ্ডিত জ্ঞান পিপাসক। তিনি ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন ভারতবর্ষের ইতিহাস বিষয়ক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তারিখ-উল-হিন্দ। এ গ্রন্থে কলিযুগের বয়স হিসেবে তিনি ৩১০২ খ্রিস্ট পূর্বকে উল্লেখ করেন।
আমার এই ছোট্ট লেখাটায় আমি বর্ত্তমান কোন দেশীয় অথবা বিদেশীয় লেখকদের বইয়ের রেফারেন্স ব্যবহার করিনি ; করেছি হাজার বছর পূর্বের লেখকদের গবেষিত সময়কাল। আপনারা লক্ষ্য করবেন তাদের গবেষিত সময়কালে কুরুক্ষেত্রের কাল এবং কলিযুগের শুরু ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ দুটি প্রধান ইতিহাসবিন্দুর মাঝে পার্থক্য সামান্য।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কাল নিয়ে আমাদের প্রাচীন পরম্পরায় দেখি ৩১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় প্লানেটরিয়াম সফটওয়ারের মাধ্যমে যে সময়কাল বের করা হয় ২০০৩ সালে সে সফটওয়ারেও বিজ্ঞানসম্মতভাব ে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কাল বের হয় ৩০৬৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ২২ নভেম্বর (পরে একসময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখবো)।
আপনাদের একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তা হলো- আমাদের পরম্পরাগত বিশ্বাস হলো আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশীর দিনে শ্রীভগবান আমাদের মাঝে গীতারবাণী দান করেন। আর আধুনিক বিজ্ঞানও প্লানেটরিয়াম সফটওয়ার সহ আরো কয়েকটি সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ (গীতার জন্মদিন) আজ থাকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সময়তো প্রায় ৫১০০ মিলে যায়ই, তার সাথে সাথে মাসও মিলে যায় ; অগ্রহায়ণ মাসের সাথে নভেম্বর মাস।
ভাবা যায়!
সবাইকে একটু দেড়িতে হলেও শ্রীমদ্ভগবদগীতা জয়ন্তীর শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং প্রণাম।
গীতার বাণী আমাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক এই হোক গীতাজয়ন্তীর সংকল্প।
জয় শ্রীকৃষ্ণ!

সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।
বৈদিক আত্মতত্ত্বের জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদ গাভীস্বরূপ, সে গাভীর দুগ্ধের দোহনকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং গাভী দোহানোর সময়ে যে বাছুরের প্রয়োজন হয় সে বাছুর অর্জুন আর দুগ্ধরূপ অমৃতময়ী গীতার জ্ঞান পান করেন, আস্বাদন করেন সুধী-জ্ঞানীগণ।
এই শ্লোকটির মর্মার্থ এককথায় বলতে হলে, এভাবে বলতে হয় - গীতা বৈদিক আধ্যাত্মিক, আত্মতত্ত্বের সকল জ্ঞানের সারাংশ। এ কারণেই গীতা আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলের জীবনে এতোটা আদরণীয় এবং যুগপৎ পূজনীয়।
এই বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ শ্রীমদ্ভগবদগীতা
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরু প্রায় একই সময়ে হয়েছে, মাঝে হয়তো সামান্য কয়েকশো বছরের ব্যবধান ছিলো। এ সময়কালটা ঠিকমতো বের করতে পারলে আমরা ভারতীয় ইতিহাসের অনেক অজানা গ্রন্থিকে মোচন করে দিতে পারি। যদি আমরা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সময় বের করতে পারি আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো কয়েকটি বিষয়ে -
১. কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল।
২.গীতার জন্মদিন।
৩.ব্যাসদেবের সময়কাল।
৪. বর্ত্তমান কল্পে ব্যসদেব কর্তৃক বেদ সম্পাদনার সময়কাল।
৫. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময়কাল।
৬.মহাভারতের সময়কাল।
৭. কুরু-পাণ্ডবদের সময়কাল।
৮.কলিযুগের শুরু।
৯. শ্রীমদ্ভাগবতের সময়কাল সহ আরো অসংখ্য ঐতিহাসিক বিষয় এবং ঘটনার সময়কাল।
এ সময় বের করার বিষয়ে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সম্পর্কে এ দেশীর প্রাচীন বিদ্বানজনেরা কে কি বলেছেন তা আগে দেখে নেই-
১. কালিদাসের নামে প্রচলিত জ্যোতির্বিদাভরণ
২. জ্যোতির্বিদ ও ভাস্করাচার্য এবং মকরন্দ নামক অপর একজন জ্যোতির্বিদের মতে কলিযুগের আরম্ভ ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৩. বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ আর্যভট্টের (৪৭৬ খ্রি.) মতে কলিযুগের আরম্ভকাল ৩১০২ খ্রিস্ট পূর্বের ১৮ ই ফেব্রুয়ারির সূর্যোদয় কাল।
৪. দক্ষিণের চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী কুরুক্ষেত্র মহাসমরের কাল নির্নয় করেন এবং তার নির্দেশে রবিকীর্তি নামক কবি ঐ কাল নির্ণায়ক শ্লোকাকারে রচনা করেন এবং পরে পুলকেশী সেই শ্লোককে শিলা ফলকে ক্ষোদিত করে অমর করে দেন। তার মতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৫. আলবেরুনী দশম -একাদশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত নানা শাস্রে সুপণ্ডিত জ্ঞান পিপাসক। তিনি ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন ভারতবর্ষের ইতিহাস বিষয়ক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তারিখ-উল-হিন্দ।
আমার এই ছোট্ট লেখাটায় আমি বর্ত্তমান কোন দেশীয় অথবা বিদেশীয় লেখকদের বইয়ের রেফারেন্স ব্যবহার করিনি ; করেছি হাজার বছর পূর্বের লেখকদের গবেষিত সময়কাল। আপনারা লক্ষ্য করবেন তাদের গবেষিত সময়কালে কুরুক্ষেত্রের কাল এবং কলিযুগের শুরু ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ দুটি প্রধান ইতিহাসবিন্দুর মাঝে পার্থক্য সামান্য।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কাল নিয়ে আমাদের প্রাচীন পরম্পরায় দেখি ৩১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় প্লানেটরিয়াম সফটওয়ারের মাধ্যমে যে সময়কাল বের করা হয় ২০০৩ সালে সে সফটওয়ারেও বিজ্ঞানসম্মতভাব
আপনাদের একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তা হলো- আমাদের পরম্পরাগত বিশ্বাস হলো আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশীর দিনে শ্রীভগবান আমাদের মাঝে গীতারবাণী দান করেন। আর আধুনিক বিজ্ঞানও প্লানেটরিয়াম সফটওয়ার সহ আরো কয়েকটি সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ (গীতার জন্মদিন) আজ থাকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সময়তো প্রায় ৫১০০ মিলে যায়ই, তার সাথে সাথে মাসও মিলে যায় ; অগ্রহায়ণ মাসের সাথে নভেম্বর মাস।
ভাবা যায়!
সবাইকে একটু দেড়িতে হলেও শ্রীমদ্ভগবদগীতা
গীতার বাণী আমাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক এই হোক গীতাজয়ন্তীর সংকল্প।
জয় শ্রীকৃষ্ণ!

0 comments:
Post a Comment