জগন্নাথ অর্থাৎ জগতের নাথ। পরমেশ্বর ভগবানের
করুণাঘন রূপ। জগন্নাথধাম হিন্দু জাতির চার ধামের এক ধাম। দেবীর ৫১ পীঠের এক পীঠ।
জগন্নাথদেবের বিগ্রহ অসম্পূর্ণ। তাঁর দৃশ্যমান হস্ত,পদ না থাকা সত্ত্বেও তিনি হস্ত-পদময়। কারণ এই জগতে এবং সকল জীবের মাঝেই
তাঁর প্রকাশ। আবার তিনি এ জগতের পারে, সকল ইন্দ্রিয়ের
পারে, ইন্দ্রিয়, বাক্য, মনের অগোচর হয়ে সদা বিরাজিত হয়ে আছেন ।
সারা ভারতবর্ষে যতো প্রাচীন মন্দির আছে তার
প্রত্যেকটি মন্দিরে বিগ্রহের কিছু স্বতন্ত্রতা আছে। তেমনি স্বতন্ত্রতা জগন্নাথ বিগ্রহের। অপরূপ করূণাঘন চোখে তাকিয়ে আছেন ভগবান ভক্তের পানে। স্কন্ধপুরাণের উৎকল
খণ্ডে জগন্নাথদেবের এ রূপের কারণ দেয়া আছে খুব সুন্দর করে, তা আমরা মোটামুটি সবাই বৃদ্ধ কারিগরের এ ঘটনাটা জানি। তাই সেদিকে আর আমি
যাচ্ছি না।
জগন্নাথদেব সনাতন হিন্দুর শাক্ত, শৈব,গাণপত্য, সৌর এবং বৈষ্ণব এ পঞ্চ মতেরই একত্বের প্রতীক। বলদেব শিবের, শুভদ্রা শক্তির, জগন্নাথ বিষ্ণু, আর সুদর্শন সূর্যের প্রতীক বলে উপাসনা করা হয়। পঞ্চমতের মধ্যে বাকি রইল
একটি গাণপত্য। তাই স্নানযাত্রার দিনে জগন্নাথদেবকে গণেশরূপে উপাসনা করা হয়। আবার
জগন্নাথদেবের যেহেতু দৃশ্যমান হস্ত-পদ নেই, তাই তিনি হস্ত-পদের পারে ব্রহ্মস্বরূপ। এবং তাঁর বিগ্রহকে বলা হয়
দারুব্রহ্ম।
জগন্নাথদেবের মন্দির শুধুমাত্র হিন্দুদের সকল
মত-পথের একতার প্রতীকই নয় ; হিন্দু জাতির একতা গঠনে
অনন্য ভূমিকা রেখেছে। জগন্নাথদেবের গর্ভগৃহে সকল হিন্দুদের সহ ভারতে উৎপন্ন বৌদ্ধ,
জৈন,শিখসহ সকল
ধর্মাবলম্বীদেরই প্রবেশের অধিকার । (শুধুমাত্র সেমেটিক ধর্মাবলম্বীদের
প্রবেশাধিকার নেই, কারণ তারা সুযোগের অসৎ ব্যাবহার করে প্রচুর
অসভ্যতা করেছে বিভিন্ন সময়।) জগন্নাথদেবের প্রসাদ ব্রাহ্মণ-শূদ্র (কথিত)
নিবির্শেষে সকলে এক সাথে, এক পাতে বসে গ্রহণ করে।
যেখানে জগন্নাথদেবের প্রসাদ পাওয়া যায়, সেই স্থানের নাম আনন্দবাজার। অপূর্ব নামকরণ! এ যেন একতার আনন্দবাজার। এ যেন জাত-পাতের রাজনীতিকে একপাশ রেখে হিন্দুত্বের মিলনের আনন্দবাজার।
যেখানে জগন্নাথদেবের প্রসাদ পাওয়া যায়, সেই স্থানের নাম আনন্দবাজার। অপূর্ব নামকরণ! এ যেন একতার আনন্দবাজার। এ যেন জাত-পাতের রাজনীতিকে একপাশ রেখে হিন্দুত্বের মিলনের আনন্দবাজার।
জগন্নাথদেবের পূজা হয় দ্বৈতভাবে, ব্রাহ্মণ পাণ্ডাদের রীতিতে এবং শূদ্র শবরদের রীতিতে। সকলেই সমান সমান
অংশগ্রহণকারী জগন্নাথদেবের উপাসনায়।
সাধারণত দেবতা থাকে মন্দিরে আর ভক্তরা এসে
বিগ্রহকে প্রণাম করে, উপাসনা করে। কিন্তু
জগন্নাথদেব এর ব্যতিক্রম তিঁনি সাধারণজনের মাঝে সাধারণজন হয়ে রাজপথে নেমে এসেছেন।
তিঁনি তো রাজাধিরাজ তিঁনিই যখন নেমে এসেছেন রাজপথে, তখন দেশের রাজার তো সাধ্য নেই রাজসিংহাসনে বসে থাকার। তিনিও চলে এসেছেন
রাজপথে সাধারনজনের কাছে। হাতে ঝাড়ু নিয়ে হয়েছেন জগন্নাথদেবের পথের ঝাড়ুদার। রাজা-
প্রজা সকলেই আজ একাকার! অপূর্ব সাম্যবাদের শিক্ষা।
শ্রীশঙ্করাচার্য, শ্রীরামানুজাচার্য,শ্রীচৈতন্যদেব সহ আমাদের
প্রায় সকল আচার্যবৃন্দেরই উপাসনার, সাধনার স্থান
ছিলো জগন্নাথ ধাম। তাই আমাদের প্রায় সকল আচার্যবৃন্দই শ্রীক্ষেত্র/পুরুষোত্তম
ক্ষেত্র /শঙ্খক্ষেত্র /নীলাচল ক্ষেত্র /মুক্তিক্ষেত্র ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিহিত
জগন্নাথধামের মাহাত্ম্যকথা প্রচার করেছেন এবং জগন্নাথদেবের মাহাত্ম্যযুক্ত স্তোত্র
রচনা করেছেন।
পরিশেষে শ্রীপাদ শঙ্করাচার্যের ভাষায়
শ্রীজগন্নাথদেবের কাছে আমাদেরও একমাত্র প্রার্থনা :
হে জগন্নাথদেব তুমি আমার নয়নপথে আসো!
তোমার কৃপাঘন ওই গোলাকার চখা-চখা
কমল নয়নকে কবে আমি আপন করে
আমার হৃদয়মাঝে পাব?
তোমার কৃপাঘন ওই গোলাকার চখা-চখা
কমল নয়নকে কবে আমি আপন করে
আমার হৃদয়মাঝে পাব?
0 comments:
Post a Comment