Our social:

Latest Post

Thursday, January 12, 2017

চিন্তানায়ক স্বামী বিবেকানন্দ

আজ ১২ জানুয়ারি বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণের পরে অন্যতম পার্বণ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন।
বিবেকানন্দের পিতৃপ্রদত্ত নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত (ডাকনাম ছিল বীরেশ্বর বা বিলে এবং নরেন্দ্র বা নরেন)।১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তি উৎসবের এক পবিত্র দিনে উত্তর কলকাতার সিমলা পল্লীর ৩ নং গৌরমোহন মুখোপাধ্যায় স্ট্রিটে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতা উচ্চ আদালতের একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। তিনি ছিলেন তার নয় ভাই-বোনের অন্যতম। তাঁর মধ্যম ভাই মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও বিদেশ ভ্রমণে বিবেকানন্দের সঙ্গী। কনিষ্ঠ ভাই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন বিশিষ্ট সাম্যবাদী নেতা ও গ্রন্থকার।
৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করা শ্রীপাদ শংকরাচার্যই প্রথম হিন্দুজাতির রক্ষার্থে সংগঠনের ধারণা এবং আধুনিক যুগে সংগঠন বলতে আমরা যা বুঝি তা তৈরি করেন। সনাতন ধর্ম রক্ষার্থে তিনি সাংগঠনিক প্রয়োজনে ভারতবর্ষকে পূর্ব,পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ - এ চারভাগে বিভক্ত করে এ চারভাগকে দেখাশুনার জন্যে তাঁর চার প্রধান শিষ্য পদ্মপাদ,হস্তামলক,তোটকাচার্য এবং সুরেশ্বর এ চার প্রধান শিষ্যকে দায়িত্ব দেন। শ্রীপাদ শংকরাচার্যের হাতে জন্ম নেয়া হিন্দু সংগঠন এবং ভারতীয় বৈদান্তিক আধ্যাত্মবাদ কিভাবে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে যাবে সে পথ আমাদের দেখান স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামীজী ছিলেন প্রাচীন এবং বর্ত্তমান ; ভারতবর্ষীয় এবং পাশ্চাত্ত্যের সফল যোগসূত্রকারী। তাঁর পূর্বেও কয়েকজন বাঙালীর সন্তান প্রতাপচন্দ্র মজুমদার এবং মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় গিয়েছিলেন ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ প্রচারে ; কিন্তু তাঁরা তেমন সফলতা বা সাড়া পাননি। কিন্তু স্বামীজী তাঁর পাণ্ডিত্য এবং বিদগ্ধতায় এলেন, দেখলেন এবং জয় করে নিলেন পাশ্চাত্য -আমেরিকানদের হৃদয়। তাঁর পরবর্তী ধারাক্রমে পাশ্চাত্য -আমেরিকায় ধর্মপ্রচারে যাঁরা অনন্য অবদান রাখেন তাঁরা হলেন-
১. স্বামী সারদানন্দ
২.স্বামী অভেদানন্দ
৩.স্বামী তুরিয়ানন্দ
৪.স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ
৫.পরমহংস যোগানন্দ
৬.মহানামব্রত ব্রহ্মচারী
৭.শ্রীচিন্ময়
৮.অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী
( প্রচারের সন অনুসারে বিবেকানন্দ পরবর্তী এই আটজনের তালিকা সাজানো হল)
স্বামী বিবেকানন্দ হলেন আধুনিক ভারতবর্ষের আইকন, আধুনিক হিন্দুজাতির আইকন। আজ আমরা প্রাচ্য- পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে যে চিন্তার কাঠামো তৈরি করি তার অন্যতম কারিগর এবং চিন্তাসূত্রকার তিনি। নেতাজী সুভাষ বসু থেকে সকল বিপ্লবীদের প্রেরণার বাতিঘর ছিলেন তিনি। তরুণ এবং যুবসম্প্রদায়ের জাগরণে তাঁর অবদান অনন্যসাধারণ। তাইতো তাঁর জন্মদিন ভারতে যুবদিবস হিসেবে পালিত। সেই ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ প্রচারের বীরসেনাপতি, চিন্তানায়ক,যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৪ তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইলো অনন্ত শ্রদ্ধা এবং প্রণাম।

 


Monday, January 9, 2017

মা সারদাদেবী


 



যাঁর ছবি-প্রতিমার দিকে তাকালে কৃপাময়ী মা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না ; সেই ঠাকুর রামকৃষ্ণের শক্তি এবং সাধনসঙ্গী মা সারদাদেবীর আজ পবিত্র জন্মতিথি। জন্মতিথিতে মায়ের শ্রীপাদপদ্মে সহস্র প্রণাম।
১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর, বাংলা ১২৬০ সনের ৮ পৌষ, অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণা সপ্তমী তিথিতে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম জয়রামবাটীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে সারদা মায়ের জন্ম হয়। তাঁর পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। সারদা দেবীর পিতৃকূল মুখোপাধ্যায় বংশ পুরুষানুক্রমে ভগবান শ্রীরামের উপাসক ছিলেন। সারদা দেবী ছিলেন তাঁদের জ্যেষ্ঠা কন্যা তথা প্রথম সন্তান। জন্মের পর প্রথমে সারদা দেবীর নাম রাখা হয়েছিল "ক্ষেমঙ্করী"। পরে "ক্ষেমঙ্করী" নামটি পালটে "সারদামণি" রাখা হয়। রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কৃষিকাজ ও পুরোহিতবৃত্তি করে জীবিকানির্বাহ করতেন এবং তিন ভাইকে প্রতিপালন করতেন। দরিদ্র হলেও রামচন্দ্র ছিলেন পরোপকারী ও দানশীল ব্যক্তি। কথিত আছে, সারদা দেবীর জন্মের আগে রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরী উভয়েই অনেক দিব্যদর্শন করেছিলেন। সারদা মায়ের জন্মের পর রামচন্দ্র ও শ্যামাসুন্দরীর কাদম্বিনী নামে এক কন্যা এবং প্রসন্নকুমার, উমেশচন্দ্র, কালীকুমার, বরদাপ্রসাদ ও অভয়চরণ নামে পাঁচ পুত্রের জন্ম হয়।
বাল্যকালে সাধারণ গ্রামবাসী বাঙালি মেয়েদের মতো সারদা দেবীর জীবনও ছিল অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে। ঘরের সাধারণ কাজকর্মের পাশাপাশি ছেলেবেলায় তিনি তাঁর ভাইদের দেখাশোনা করতেন, জলে নেমে পোষা গোরুদের আহারের জন্য ঘাস কাটতেন, ধানখেতে ক্ষেতমজুরদের জন্য মুড়ি নিয়ে যেতেন, প্রয়োজনে ধান কুড়ানোর কাজও করেছেন। সারদাদেবীর প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা একেবারেই ছিল না। ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে পাঠশালায় যেতেন। তখন তাঁর কিছু অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্রী লক্ষ্মী দেবী ও শ্যামপুকুরে একটি মেয়ের কাছে ভাল করে লেখাপড়া করা শেখেন। ছেলেবেলায় গ্রামে আয়োজিত যাত্রা ও কথকতার আসর থেকেও অনেক পৌরাণিক আখ্যান ও শ্লোক শিখেছিলেন। ছেলেবেলায় পুতুলখেলার সময় লক্ষ্মী ও কালীর মূর্তি গড়ে খেলাচ্ছলে পূজা করতেন। সেই সময় থেকেই তাঁর বিবিধ দিব্যদর্শনের অভিজ্ঞতা হত। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। এ বিবাহই তাকে এক কিংবদন্তী দিব্য মাতৃপ্রতিমায় পরিণত করে।
১৯২০ সালের ২০ জুলাই ৬৬ বছর বয়সে তিনি মহাসমাধী লাভ করেন পশ্চিমবাংলার কলকাতার
বাগবাজার মায়ের বাড়িতে।
মায়ের জন্মতিথিতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি সরূপ তার অসংখ্য বাণী হতে আটটি বাণী নিচে তুলে দিচ্ছি ; আশাকরি আপনাদের জীবন চলাতে এ কথাগুলো কাজে লাগবে।
১. আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী।
২.যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।
৩. ভালবাসায় সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।
৪.সৎসঙ্গে মেশো, ভাল হতে চেষ্টা কর, ক্রমে সব হবে।
৫.কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।
৬. মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।
৭.ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে কজনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কি করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে কজনে?
৮.যারা এসেছে, যারা আসেনি, যারা আসবে, আমার সকল সন্তানকে জানিয়ে দিও, মা, আমার ভালবাসা, আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে।


 


শ্রীমদ্ভগবদগীতা

আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর আগে এই অগ্রহায়ণ মাসেই শ্রীভগবান আমাদের মাঝে শ্রীমদ্ভগবদগীতার বাণী দেন। যা বৈদিক জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদের সারাংশ। এই কারণে গীতার শুরুতে মঙ্গলাচরণ ধ্যানেই বলা হয়েছে-
সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।
বৈদিক আত্মতত্ত্বের জ্ঞানকাণ্ড উপনিষদ গাভীস্বরূপ, সে গাভীর দুগ্ধের দোহনকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং গাভী দোহানোর সময়ে যে বাছুরের প্রয়োজন হয় সে বাছুর অর্জুন আর দুগ্ধরূপ অমৃতময়ী গীতার জ্ঞান পান করেন, আস্বাদন করেন সুধী-জ্ঞানীগণ।
এই শ্লোকটির মর্মার্থ এককথায় বলতে হলে, এভাবে বলতে হয় - গীতা বৈদিক আধ্যাত্মিক, আত্মতত্ত্বের সকল জ্ঞানের সারাংশ। এ কারণেই গীতা আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকলের জীবনে এতোটা আদরণীয় এবং যুগপৎ পূজনীয়।
এই বৈদিক জ্ঞানের সারাংশ শ্রীমদ্ভগবদগীতা ঠিক কত বছর পূর্বে আমাদের মাঝে আবির্ভূত হয় তা নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক মতান্তর। অবশ্য মতান্তরগুলো তৈরির পিছনে দায়ী প্রধানত ইয়োরোপ, আমেরিকা সহ বিভিন্ন বিদেশী পণ্ডিতকূল এবং তাদের মতানুসারী দেশীয় পণ্ডিতকূল । তাদের একটা বৃহত্তম অংশই ইচ্ছা খুশী মতো আমাদের বৃহৎভারতবর্ষের বিভিন্ন গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক ঘটনায় ইতিহাসের সাহিত্যিক এবং পুরাতাত্ত্বিক উপাদানের তোয়াক্কা না করে যেমন খুশী সময়কাল বসিয়ে দিয়েছেন তাদের লেখা গ্রন্থগুলোতে। এ কারণে আমাদের ইতিহাসের সকল বিষয় নিয়ে আমরা প্রচণ্ড ধুম্রজালে আচ্ছন্ন হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বলে বেড়াই আমাদের কোন সঠিক ইতিহাস নেই!
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরু প্রায় একই সময়ে হয়েছে, মাঝে হয়তো সামান্য কয়েকশো বছরের ব্যবধান ছিলো। এ সময়কালটা ঠিকমতো বের করতে পারলে আমরা ভারতীয় ইতিহাসের অনেক অজানা গ্রন্থিকে মোচন করে দিতে পারি। যদি আমরা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সময় বের করতে পারি আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো কয়েকটি বিষয়ে -
১. কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল।
২.গীতার জন্মদিন।
৩.ব্যাসদেবের সময়কাল।
৪. বর্ত্তমান কল্পে ব্যসদেব কর্তৃক বেদ সম্পাদনার সময়কাল।
৫. ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সময়কাল।
৬.মহাভারতের সময়কাল।
৭. কুরু-পাণ্ডবদের সময়কাল।
৮.কলিযুগের শুরু।
৯. শ্রীমদ্ভাগবতের সময়কাল সহ আরো অসংখ্য ঐতিহাসিক বিষয় এবং ঘটনার সময়কাল।
এ সময় বের করার বিষয়ে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাল এবং কলিযুগের শুরুর সম্পর্কে এ দেশীর প্রাচীন বিদ্বানজনেরা কে কি বলেছেন তা আগে দেখে নেই-
১. কালিদাসের নামে প্রচলিত জ্যোতির্বিদাভরণ গ্রন্থের দশম অধ্যায়ে বলা আছে মহাভারতের যুদ্ধের পরে যুধিষ্ঠিরের ক্ষমতা সময় হলো ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্ব।
২. জ্যোতির্বিদ ও ভাস্করাচার্য এবং মকরন্দ নামক অপর একজন জ্যোতির্বিদের মতে কলিযুগের আরম্ভ ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৩. বিখ্যাত গণিতজ্ঞ এবং জ্যোতির্বিদ আর্যভট্টের (৪৭৬ খ্রি.) মতে কলিযুগের আরম্ভকাল ৩১০২ খ্রিস্ট পূর্বের ১৮ ই ফেব্রুয়ারির সূর্যোদয় কাল।
৪. দক্ষিণের চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশী কুরুক্ষেত্র মহাসমরের কাল নির্নয় করেন এবং তার নির্দেশে রবিকীর্তি নামক কবি ঐ কাল নির্ণায়ক শ্লোকাকারে রচনা করেন এবং পরে পুলকেশী সেই শ্লোককে শিলা ফলকে ক্ষোদিত করে অমর করে দেন। তার মতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের কাল ৩১০১ খ্রিস্ট পূর্বে।
৫. আলবেরুনী দশম -একাদশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত নানা শাস্রে সুপণ্ডিত জ্ঞান পিপাসক। তিনি ১০৩০ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন ভারতবর্ষের ইতিহাস বিষয়ক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তারিখ-উল-হিন্দ। এ গ্রন্থে কলিযুগের বয়স হিসেবে তিনি ৩১০২ খ্রিস্ট পূর্বকে উল্লেখ করেন।
আমার এই ছোট্ট লেখাটায় আমি বর্ত্তমান কোন দেশীয় অথবা বিদেশীয় লেখকদের বইয়ের রেফারেন্স ব্যবহার করিনি ; করেছি হাজার বছর পূর্বের লেখকদের গবেষিত সময়কাল। আপনারা লক্ষ্য করবেন তাদের গবেষিত সময়কালে কুরুক্ষেত্রের কাল এবং কলিযুগের শুরু ভারতবর্ষের ইতিহাসে এ দুটি প্রধান ইতিহাসবিন্দুর মাঝে পার্থক্য সামান্য।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কাল নিয়ে আমাদের প্রাচীন পরম্পরায় দেখি ৩১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় প্লানেটরিয়াম সফটওয়ারের মাধ্যমে যে সময়কাল বের করা হয় ২০০৩ সালে সে সফটওয়ারেও বিজ্ঞানসম্মতভাবে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময়কাল বের হয় ৩০৬৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ২২ নভেম্বর (পরে একসময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখবো)।
আপনাদের একটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তা হলো- আমাদের পরম্পরাগত বিশ্বাস হলো আজ থেকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বের শুক্লপক্ষের মোক্ষদা একাদশীর দিনে শ্রীভগবান আমাদের মাঝে গীতারবাণী দান করেন। আর আধুনিক বিজ্ঞানও প্লানেটরিয়াম সফটওয়ার সহ আরো কয়েকটি সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ (গীতার জন্মদিন) আজ থাকে প্রায় ৫১০০ বছর পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। সময়তো প্রায় ৫১০০ মিলে যায়ই, তার সাথে সাথে মাসও মিলে যায় ; অগ্রহায়ণ মাসের সাথে নভেম্বর মাস।
ভাবা যায়!
সবাইকে একটু দেড়িতে হলেও শ্রীমদ্ভগবদগীতা জয়ন্তীর শুভেচ্ছা, অভিনন্দন এবং প্রণাম।
গীতার বাণী আমাদের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক এই হোক গীতাজয়ন্তীর সংকল্প।
জয় শ্রীকৃষ্ণ!


শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের মহাপরিনির্বাণ দিবস

গতকাল ৮ জানুয়ারি ছিলো শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের মহাপরিনির্বাণ দিবস। প্রণবানন্দেজীর আদর্শ এবং শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক। আমি গর্বিত এমন এক দৈবশক্তিসম্পন্ন মহাপুরুষের জন্ম আমাদের মাদারীপুরে হয়েছে।
স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ ১৮৯৬ সালের ২৯ জানুয়ারি বুধবার মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে মাদারীপুর জেলার বাজিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিষ্ণুচরণ ভূঞা এবং মাতার নাম সারদাদেবী। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল বিনোদ। নাথ সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা গোরক্ষপুরের মহাযোগী বাবা গম্ভীরনাথজীর নিকট ১৯১৩ সালে ১৭ বৎসর বয়সে তিনি দীক্ষালাভ করেন এবং ১৯১৬ সালে মাত্র ২০ বৎসর বয়সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন। ১৯২৪ সালে প্রয়াগে অর্দ্ধকুম্ভমেলায় স্বামী গোবিন্দানন্দ গিরির নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ন্যাস গ্রহণ করে স্বামী প্রণবানন্দ নামে পরিচিত হন। ১৯৪১ সালের ৮ জানুয়ারি মাত্র ৪৫ বৎসর বয়সে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। তাঁর পবিত্র দেহকে মাদারীপুরের বাজিতপুরে তাঁর জন্মস্থলে বিরাজিত সাধনক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়।
( ছবি দেয়া আছে)

আজ থেকে শতবর্ষ পূর্বে তিনি সনাতন ধর্মের প্রচার এবং প্রসারে সন্ন্যাসী সংঘ গঠন করেন, যে প্রতিষ্ঠান আজ ভারত সেবাশ্রম সংঘ নামে পৃথিবী খ্যাত। আর্ত-পীড়িত গরিব মানুষের জন্যে জীবন রক্ষায় ত্রাণের ব্যবস্থা , সমাজ-সংস্কার, তীর্থস্থান সংস্কার, ধর্মচক্র, কর্মচক্রের প্রবর্তন এবং হিন্দু মিলন মন্দির সহ অসংখ্য
অনন্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি উদ্ভাসিত হয়ে আছেন আমাদের হৃদয়ালোকে।
সর্বদা জ্যোতির্ময় তাঁর কিছু বাণী :
লক্ষ্য কি?- মহামুক্তি, আত্মতত্ত্বোপলব্ধি।
ধর্ম কি ?- ত্যাগ, সংযম, সত্য, বহ্মচর্য।
মহামৃত্যু কি ?- আত্মবিস্মৃতি।
প্রকৃত জীবন কি?- আত্মবোধ, আত্মস্মৃতি, আত্মানুভূতি। মহাপূণ্য কি ?- বীরত্ব, পুরুষত্ব, মনুষ্যত্ব, মুমুক্ষত্ব (মুক্তি পাওয়ার ইচ্ছা)।
মহাপাপ কি ?- দুর্বলতা, ভীরুতা, কাপুরুষতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা।
মহাশক্তি কি ?- ধৈর্য, স্থৈর্য, সহিষ্ণুতা।
মহাসম্বল কি ?- আত্মবিশ্বাস, আত্মনির্ভরতা, আত্মমর্যদা। মহাশত্রু কি?- আলস্য, নিদ্রা, তন্দ্রা, জড়তা, রিপু ও ইন্দ্রিয়গণ।
পরম মিত্র কি ?- উদ্যম, উৎসাহ, অধ্যবসায়।




Thursday, January 5, 2017

নাতন বিদ্যার্থী সংসদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক বাৎসরিক আনন্দভ্রমন

আজ সারাদিন অনেক কর্মব্যস্ত এবং আনন্দঘন কাটালাম। সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এক বাৎসরিক আনন্দভ্রমন এবং সংক্ষিপ্ত কর্মী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় সহ চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ,মহসিন কলেজ এবং হাটহাজারী কলেজ সহ চট্টগ্রামের প্রায় খ্যাতনামা কলেজের প্রায় সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।
প্রথমে ব্রহ্মজ্ঞপুরুষ শ্রীঅদ্বৈতানন্দের স্মৃতিবিজড়িত বাঁশখালীর ঋষিধাম দর্শন এবং তাঁর দৈব আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয় ; পরে জঙ্গল জলদীতে তাঁর শিষ্য চিন্তাহরণ পুরীর আশ্রমে সমবেত ধর্মচক্র, কর্মী প্রশিক্ষণ সহ সকল অনুষ্ঠান সফলভাবে আয়োজিত হয়।
আমার ধারণা আজকের দিনটি অংশগ্রহণকারী সকলের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ; আর এভাবেই আমাদের ঋত-ঋদ্ধির পথে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।

 

যিশুখ্রিস্টকে ভগবানের অবতার এবং শান্তি-প্রেমের অবতার বলেই জানতান।

আমাদের পরিবার রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে যুক্ত থাকার কারণে ছোটবেলায় যিশুখ্রিস্টকে ভগবানের অবতার এবং শান্তি-প্রেমের অবতার বলেই জানতান।
কিন্তু বাইবেল পড়তে যেয়ে বেশ কয়েকটি স্থানে আমি হোচট খাই, যেমন যে যিশুকে আমরা শান্তির অবতার বলে জানি সেই যিশুই যখন বাইবেলে বলছে:
"আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসেছি এই কথা মনে করো না। আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি ; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, বৌকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি।
একজন মানুষের নিজের পরিবারের লোকেরাই তাঁর শত্রু হবে।
যে কেউ আমার চেয়ে মা-বাবাকে বেশী ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়। আর যে কেউ ছেলে বা মেয়েকে আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার উপযুক্ত নয়। যে নিজের ক্রুশ নিয়ে আমার পথে না চলে সে-ও আমার উপযুক্ত নয়। যে কেউ নিজের জীবন রক্ষা করতে চায় সে তার সত্যিকারের জীবন হারাবে ; কিন্তু যে কেউ আমার জন্য তার প্রাণ হারায় সে তার সত্যিকারের জীবন রক্ষা করবে।"
( বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত পবিত্র বাইবেল : মথি, ৩৪-৩৯ ; পবিত্র নূতন নিয়মের ১৪ পৃষ্ঠা)

যিশুর বলা এই কথাগুলোর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানতে চাই ; যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ আছেন তারা মতামত দিবেন প্লিজ।
সবাইকে বড়দিনের শুভেচ্ছা!


সংখ্যালঘুদের উপরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৩১০ টি

শুধুমাত্র ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসেই সংখ্যালঘুদের উপরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে ৩১০ টি। ভাবা যায়!
আর দুর্ভাগ্যবশত আমাদের সাধু-সন্তরা এসি রুমে সুয়ে, এবং কোটি টাকার এসি গাড়িতে ঘুরে বলে বেড়ান-
"এগুলো সকল বিচ্ছিন্ন ঘটনা! "
অথবা,
"অত্যাচারিত হওয়া সকলই গোবিন্দের ইচ্ছা, নিত্যসেবার টাকা বাড়িয়ে দিন ; তবেই গোবিন্দ এবং শ্রীমতি রাধারানী কৃপা করে আপনাদের রক্ষা করবে।"
অথবা,
ঠাকুরের প্রণামীর টাকা আগে যা দিতেন তা থেকে টাকা বাড়িয়ে দিন এবং মাসের ৩০ তারিখের মধ্যেই পাঠাবেন ;
তবেই দয়াল ঠাকুরের কৃপায় সকল সমস্যার সমাধান।

ইত্যাদি, ইত্যাদি আরো অনেক কথা!
২০১৬ সালের একাদশ মাস নভেম্বরে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর কমপক্ষে ৩১০টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এ সবের অধিকাংশ একক ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি, পরিবার, আদিবাসী সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার সংখ্যা কমপক্ষে কয়েক হাজার এ সময়ে ১১ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪২ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩ জন, জমিজমা, ঘরবাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, দখল ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে সহস্রাধিক। ২০১০টি পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকিসহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বড়িঘর, প্রতিমা ভাঙ্গচুর ৫৭টি, মন্ডবে হামলা, আগুন ও চুরি ৫৪টি। জীবন নাশের হুমকি ২, আসামি করা হয়েছে এবং জেল ২ জনের, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৩টি, বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে ৬টি হিন্দু পরিবারকে, সম্পত্তি দখল ৪ হিন্দু পরিবারের যার আর্থিক পরিমান প্রায় ২০ কোটি টাকা এবং নারীসহ শিশু ধর্ষণ ৫জন, ধর্মান্তরিত ১, অপহরণ ৩। গাইবান্ধায় সাঁওতালদের ২ হাজারের বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয় আর আসামী করা হয় শতাধিক আদিবাসীকে। নাসিরনগর, ফেনী এবং গাইবান্ধার ঘটনাসহ এমন ৭টি ঘটনার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। আর প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই ঘটনাগুলো ঘটে বলে অভিযোগ।